Saturday 7 September 2019

মহাত্মা গান্ধী

                       
                               গুজরাটের পুর বন্দরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে গান্ধীজীর জন্ম, 1869 সালের 2 রা অক্টোবর । বাবার নাম করমচাঁদ গান্ধী । ছেলেবেলায় তার নাম ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । গান্ধী ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের সাথে পোরবন্দরে ছিলেন । সেখানকার স্থানীয় পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হলেও যখন তার বয়স সাত বছর বাবারাজ কোর্টের বিচারপতি হয়ে গেলেন ফলে রাজকোট পাঠশালায় ভর্তি হতে হয় এবং পরে হাই স্কুলে ভর্তি হলেন । মাত্র 13 বছর বয়সে গান্ধীজীর বিবাহ হয়ে যায় । গান্ধীর কাছে সেই সময়ে স্ত্রী কন্তুরি বাই ছিলেন খেলার সাথী । কন্তুরিবাই ছিলেন সম্পূর্ণ নিরক্ষর । গান্ধীজির আন্তরিক চেষ্টায় সামান্য পড়াশোনা শিখেছিলেন । বিবাহের তিন বছরের মধ্যেই গান্ধীজীর পিতা মারা গেলেন । 1880 সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে, স্থানীয় কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে ওঠে । গান্ধীর পরিবারের সকলেই ছিলেন নিরামিষভোজী এবং রক্ষণশীল মনোভাবের । ছেলের বিলেতে গিয়ে বংশের নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাবে এই আশঙ্কায় কেউই তাকে প্রথমে যাবার অনুমতি দিতে চায় না । শেষ পর্যন্ত গান্ধীর বড় ভাই তাকে বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার অনুমতি দিলেন । 1888 সালে তিনি ইংল্যান্ডের পথে রওনা হলেন । অল্পদিনের মধ্যেই তিনি নিজের অভ্যস্থ জীবন শুরু করলেন ।
                              1891 সালে গান্ধী ব্যারিস্টারি পাস করে ভারতে ফিরে এলেন । কয়েক মাস পরিবারের সকলের সাথে রাজকোটে থাকার পর বোম্বাই গেলেন । উদ্দেশ্য ব্যারিস্টারি করার । কিন্তু চার মাসের মধ্যে অর্থ উপার্জনে তেমন কোন সুবিধা করতে পারলেন না । এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার আব্দুল্লাহ কোম্পানির একটি মামলা পরিচালনা করার ব্যাপারে গান্ধীর ভাইয়ের কাছে সংবাদ পাঠালেন, তবে তার সমস্ত খরচ ছাড়াও মাসে 105 পাউন্ড করে দেবেন বলে কথা হয়েছিল । গান্ধী প্রস্তাব মেনে নিলেন এবং 1893 সালে এপ্রিল মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার পথে রওনা হলেন । এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার একটি ঘোষণায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার হুকুম জারি করে । এই অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি । স্থির করলেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবেন । গান্ধীর আন্দোলন সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে অভূতপূর্ব উদ্দীপনা সৃষ্টি করল এবং প্রায় 10 হাজার ভারতীয়দের সাক্ষ্য দেওয়া দরখাস্ত উপনিবেশ মন্ত্রী লর্ড রিপনের কাছে পাঠানো হলো । মূলত তারই চেষ্টায় 1894 সালে 22শে may গঠণ হলো ভারতীয় কংগ্রেস । গান্ধী হলেন তার প্রথম সম্পাদক ।
                               এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য ভারতবর্ষে ফিরে এসে নিজের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় রওনা হলেন । দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভাল ও এরেনজিয়া প্রদেশের বুয়র সম্প্রদায় প্রভৃত্ব ছিল । এই বুয়র দের সাথে সোনার খনির কর্তৃত্ব নিয়ে 1899 সালে ইংরেজদের যুদ্ধ হলো ।গান্ধী তাদের সমর্থন না করে রাজত্ব প্রজা হিসেবে ইংরেজদের সেবা করার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী তৈরি করলেন । এই বাহিনী আহত সৈন্যদের সেবা করে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছিল । এই যুদ্ধের পরবর্তী কাল থেকে গান্ধীর জীবনে পরিবর্তন দেখা দিল । তিনি সরল সাদাসিধে জীবন যাপন করতে আরম্ভ করলেন ।
                             1906 সালে ট্রান্সভালে এক অর্ডিন্যান্স জারি করে  8 বছরের উপর সব ভারতীয় নারী পুরুষকে নাম রেজিস্ট্রি করার আদেশ দেওয়া হয় এবং সকলকে দশ আঙুলের ছাপ দিতে হবে বলে নতুন আইনে ঘোষণা করা হয় । এতে গান্ধীর তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করলেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিকার করার জন্য ভারতীয়দের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন আরম্ভ করলেন । গান্ধী আরো বহু ভারতীয়দের সাথে বন্দী হলেন । তার দু মাস কারাদণ্ড হলো । এই প্রথম কারাবরণ করলেন গান্ধী । 15 দিন পর সরকার কিছুটা নরম হলে গান্ধীর সাথে চুক্তি হলো যে ভারতীয়রা যদি স্বেচ্ছায় রেজিস্ট্রি করে তবে এই আইন তুলে নেওয়া হবে । অনেক সম্প্রদায় এই আইন মেনে নিলেও পাঠান রা তা মেনে নিলো না । তাদের ধারণা হলো গান্ধীজী বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ।
                                গান্ধীর আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও ইংরেজরা তার কোনো দাবি মেনে নেয় নি । সত্যাগ্রহ আন্দোলন ক্রমশ বেড়ে চলে ।  গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন অন্যদের হাতে তুলে দিয়ে প্রথমে ইংল্যান্ডে যান কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভারতে ফিরে এলেন । 1915 সালে আমেদাবাদের কাছে কোচরার নামে এক জায়গায় সত্যাগ্রহ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করলেন  । সে সময় ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক আফ্রিকায় পাঠানো হতো । এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন গান্ধী । কিছুদিনের মধ্যেই এই আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করল । এর ফলশ্রুতিতে 1917 সালে 31 শে জুলাই ভারত থেকে শ্রমিক পাঠানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো ।
                               1918 সালে ইউরোপের বুকে চলছে বিশ্ব যুদ্ধ । ইংরেজরাও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন । বড়লাট লর্ড চেমসফোর্ড  গান্ধী কে দিল্লিতে ডেকে পাঠালেন । তিনি এই যুদ্ধে ভারতীয় দের পক্ষ থেকে সমর্থনের জন্য অনুরোধ করলেন । গান্ধীর ধারণা হয়েছিল ভারতবর্ষে ইংরেজদের সাহায্য করলে কিছু কাজের হবে কিন্তু অচিরেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল । ইংরেজের  প্রতি তার ছিল এক মোহ যা থেকে তিনি কোনওদিনই মুক্তি হতে পারেননি । যুদ্ধের পর সকলে আশা করেছিল ভারতবাসী স্বায়ত্তশাসন পাবে কিন্তু তার পরিবর্তে বড়লাট রাওলাট আইন নামে এক দমনমূলক আইন পাশ করলেন । এতে বলা হলো কেউ সামান্য সরকারি-বিরোধী কাজকর্ম করলে তাকে বিনা বিচারে বন্দি করা হবে ।
                              13 এপ্রিল রামনবমীর মেলা উপলক্ষে জালিয়ানওয়ালাবাগ নামে এক জায়গায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হলো । জাইগাটার চারিদিকে উঁচু প্রাচীর বের হবার একমাত্র পথ ছিলো তার গেট । ডায়ারের নির্দেশ এই নিরীহ জনগণের ওপর নির্মম ভাবে গুলি চালানো হলে কয়েক হাজার মানুষ মারা যায় । এই হতাহতের ঘটনায় সমস্ত দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়লো । বহু জায়গায় হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হল । গান্ধীর সত্যাগ্রহ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলেও তিনি নিজের ভুল স্বীকার করলেন ।
                             নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে 1923 সালে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব সমর্থিত করা হলো । গান্ধী ইংরেজ সরকারের সাথে সহযোগিতা করতে নিষেধ করলেন । তিনি বললেন সরকারি স্কুল-কলেজ, আইন-আদালতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে । ব্যবস্থাপক সভা বর্জন করতে হবে । বিদেশি দ্রব্য বর্জন করতে হবে ।  স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য চরকা ও তাঁত প্রচলন করতে হবে । গান্ধীর ডাকে সাড়া পাওয়া গেল । দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি কাপড় পড়ানো শুরু হলো । মানুষ নিজের হাতে বানানো কাপড় পরা শুরু করলো । 1922 সালে 8 ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরাই উত্তেজিত জনতা কিছু পুলিশকে হত্যা করল । এর প্রতিবাদে তিনি আন্দোলন বন্ধ করে দিলেন । গান্ধীকে গ্রেফতার করা হল । দেশব্যাপী আন্দোলনের দায় গান্ধী নিজেই স্বীকার করে নিলেন ।  বিচারে তাকে 46 বছর কারাদণ্ড দেওয়া হলো । জেলে তিনি চরকা কাটতে চাইলেন কিন্তু তাকে সে অনুমতি দেওয়া হল না । তিনি উপবাস শুরু করলেন  । শেষ পর্যন্ত তার সব দাবি মেনে নেওয়া হল । কিন্তু কিছুদিন পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন । এই অসুস্থতার জন্য তাকে 1924 সালের 5 ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হল ।
                                  1925, 26,27 সালে গান্ধীজী কংগ্রেসের অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নি । সুভাষচন্দ্র ও জহরলাল নেহরু পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তুলে একটি প্রস্তাব আনতে চান । তিনি চেয়েছিলেন আপোষ আলোচনার মাধ্যমে স্বায়ত্ব শাসন । তখন নিয়ম ছিল ভারতবাসী লবণ তৈরি করতে পারবে না । এমনকি যারা সমুদ্রের ধারে থাকে তারাও প্রস্তুত করতে পারবেনা । সকলকেই ব্রিটিশ সরকারের লবণ কিনতে হবে । অল্প দিনের মধ্যেই সমগ্র ভারত জুড়ে শুরু হলো লবণ আইন অমান্য আন্দোলন । গ্রাম-শহরে মানুষ লবণ তৈরি করতে আরম্ভ করল । হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করা হলো । দেশের সাধারণ মানুষের উপর শুরু হলো অকথ্য অত্যাচার । সেইসময় কমবেশি প্রায় 1 লক্ষ সত্যাগ্রহী কারারুদ্ধ হল ।বাধ্য হয়ে লর্ড ডারউইন গান্ধীর সাথে বৈঠকে বসলেন এবং তাদের মধ্যে চুক্তি হলো, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ লবণ তৈরি করতে পারবে এবং বিক্রি করতে পারবে । দেশের সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানানো হলো । 1930 সালের 15 আগস্ট তিনি যাত্রা করলেন ইংল্যান্ডের পথে । সেখানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্রাট পঞ্চম জর্জ এবং সম্রাজ্ঞীর সাথে আলোচনা করলেন । পরনে অর্ধনগ্ন ফকিরের মতন পোশাক । সেই সময় ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন । এদের মধ্যে ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ, চার্লি চ্যাপলিন ইত্যাদি ।  সমস্ত আলাপ আলোচনা ব্যর্থ হলো ।
                                     গান্ধী যখন দেশে ফিরলেন দেশজুড়ে তখন চলছে নির্যাতন-নিপীড়ন । নেতৃস্থানীয় সকলেই বন্দী । বন্দী করা হলো গান্ধী কেউ । বুঝতে পেরেছিলেন কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য তাকে শ্রদ্ধা করলেও তার নীতি আদর্শ মেনে চলে না । সত্যাগ্রহের আদর্শ অনুসরণ করে চলে না । তাই তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করলেন । 1946 সালে গান্ধীজী শান্তিনিকেতন এলেন । কবিগুরুর সাথে ছিল তার মধুর আন্তরিক সম্পর্ক । শান্তিনিকেতনের কাজে গান্ধীর নানাভাবে রবীন্দ্রনাথকে সাহায্য করেছেন । এই বছরে রামগড়ে নতুন কংগ্রেস অধিবেশন বসল । মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন । অধিবেশনে ঘোষণা করা হলো একমাত্র পূর্ণ স্বাধীনতাই ভারতের কাম্য । গান্ধীকে পুনরায় দলের নেতা নির্বাচিত করা হল । শুরু হলো  সত্যাগ্রহ আন্দোলন । 1942 সালে 9 আগস্ট বোম্বায়েতে নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির সভায় 'ভারতছাড়ো' প্রস্তাব গৃহীত হলো । কংগ্রেসের সমস্ত নেতাকে গ্রেফতার করা হল । গান্ধী,সরোজিনী নাইডু,মহাদেব দেশাই মিরাবেন কে বন্দি করে আগা খাঁ  প্রসাদে রাখা হলো । সারা ভারত উত্তাল হয়ে উঠল । শুরু হলো গণবিক্ষোভ । পুলিশের হাতে প্রায় 1000 লোক মারা পড়ল । গান্ধীর শরীরের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে । ইংরেজ সরকার অনুভব করতে পারল কারাগারে গান্ধীর কোন ক্ষতি হলে সমস্ত বিশ্বের কাছে তাদের কৈফত দিতে হবে । তাই বিনাশর্তে গান্ধীকে মুক্তি দেয়া হলো ।
                                   1945 সালে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইংল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে শ্রমিকদল জয়ী হলো । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইংল্যান্ড কে এত বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল যে তারা উপলব্ধি করতে পারছিল ভারতের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয় । এদিকে দেশের মধ্যে হিন্দু মুসলমানের বিভেদ প্রবল আকার ধারণ করতে থাকে । শুরু হলো ভয়াবহ দাঙ্গা । পারস্পরিক এই দাঙ্গা বিভেদে গান্ধী গভীর দুঃখিত হয়েছিলেন । তিনি চেয়েছিলেন হিন্দু মুসলমানের ঐক্য, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ নয় । কিন্তু তিনি বেদনাহত হলেন । দেশ বিভাগের মধ্য দিয়ে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করল ।
                                   দিল্লিতেও তখন নানান সমস্যা । এদিকে দাঙ্গাপীড়িত মানুষ, মন্ত্রিসভায় মতানৈক্য, খাদ্য বস্ত্রের সমস্যা ।  দিল্লিতে মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য তিনি অনশন করলেন এবং এই তার শেষ অনশন ।  সম্মিলিত সকলের অনুরোধে 18 জানুয়ারি অনশন ভঙ্গ করলেন । এই সময় গান্ধী নিয়মিত প্রার্থনা সভায় যোগ দিতেন । 30 শে জানুয়ারি তিনি প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে চলেছেন এমন সময় ভিড় ঠেলে তার সামনে এগিয়ে এলো এক যুবক । সকলের মনে হলো সে বোধহয় গান্ধীকে প্রণাম করবে । কিন্তু কাছে এসে সামনে ঝুঁকে পড়ে পরপর তিনবার পিস্তলের গুলি চালাল । দুটি পেতে ও একটি বুকে বিধলো । সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন । তার মুখ থেকে শুধু দুটি শব্দ বের হলো "হে রাম" । তার পরেই সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল । সমস্ত দেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো, পরদিন যমুনার তীরে চিতার আগুনে তার প্রার্থীব দেহ বশ্মিভূত হয়ে গেল । দেশ-বিদেশ থেকে মানুষেরা শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠালেন । তাদের মধ্যে ছিলেন দেশবরেণ্য মানুষেরা । তাদের সকলের কাছে গান্ধী বিপন্ন মানব সভ্যতার সামনের একমাত্র আশার আলো ।




Friday 6 September 2019

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

                                 
CHILD RABI

THE RABINDRANATH
   
                                দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন ব্রাহ্মণধর্মে দীক্ষিত । উপনিষদের সুমহান আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন । তাঁর স্ত্রী সারদা দেবী ছিলেন 15 টি সন্তানের জননী । রবীন্দ্রনাথ তার চতুর্দশ সন্তান । তার জন্ম হয় ঠাকুরবাড়িতে 8 may 1861 সালে । ঠাকুরবাড়ি ছিল সেই যুগের সাহিত্য, সংস্কৃতির, শিল্পকলা, সংগীতের পীঠস্থান ।দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ, মধ্যম সত্যেন্দ্রনাথ, পরবর্তী সন্তান হেমেন্দ্রনাথ, যতীন্দ্রনাথ সকলেই ছিলেন প্রতিভাবনা । রবীন্দ্রনাথের জীবনে এই চার ভাইয়ের প্রভাব পড়েছিল খুব বেশি ।  

                      শিশু রবীন্দ্রনাথের জীবন কেটে ছিল নিতান্তই সরল সাদাসিদে ভাবে ঝি-চাকরদের হেফাজতে । একটু বড় হতেই প্রথমে ভর্তি হলেন ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে । অল্প কিছুদিন পর সেখান থেকে গেলেন নরমাল স্কুলে । বাড়িতে ছেলেদের সর্ববিদ্যা পারদর্শী করার জন্য বিচিত্র শিক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল । ভোরবেলায় পালোয়ানের কাছে কুস্তি শেখা, তারপর গৃহশিক্ষকের কাছে বাংলা, অংক, ভূগোল, ইতিহাস পড়া । তারপর স্কুল ছুটির পর ইংরেজি পড়া, ছবি আঁকা ও জিমন্যাস্টিক । রবিবার সকালে বিজ্ঞান পড়া । 11 বছর বয়সে প্রথম মুক্তির স্বাদ পেলেন রবীন্দ্রনাথ । পিতা দেবেন্দ্রনাথের সাথে শান্তিনিকেতনে এলেন 1873 সালে । বোলপুর তখন নিত্যান্ত এক গ্রাম । সেই প্রথম প্রকৃতির সাথে পরিচয় হলো । এখানেই বালক কবির কাব্য রচনার সূত্রপাত । বোলপুর থেকে হিমালয়, চারমাস পশ্চিমের ভ্রমণ শেষ করে কলকাতায় ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথ ।

                   স্কুল ভালো লাগে না । বাড়িতেই শিক্ষক স্থির হলো । পড়াশোনা আর কবিতা লেখা । 13 বছর 8 মাস বয়সে অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রথম কবিতা ছাপা হলো, "হিন্দুমেলার উপহার"

                  1877 সালে দ্বিজেন্দ্রনাথ এর সম্পাদনায় ভারতী পত্রিকা বের হলো । নিয়মিত লিখে চলেন রবীন্দ্রনাথ । 16 বছর বয়সে লিখলেন "ভানুসিংহের পদাবলী" । ধীরে ধীরে কৈশোরে উত্তীর্ণ হলো রবীন্দ্রনাথ ।অভিভাবকদের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও স্কুলের গন্ডি উত্তীর্ণ হতে পারলেন না । স্থির হল বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টার হবেন । সত্যেন্দ্রনাথের সাথে লন্ডনে গিয়ে প্রথমে পাবলিক স্কুল তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন । কিন্তু পড়াশোনায় মন নেই, বেশিরভাগ সময়কাটে সাহিত্যচর্চা আর নাচে গানে । দেড় বছর বিলেতে কাটালেন । যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন তার  কিছুই হলো না । দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে দেশে ফিরে এলেন । তখন তিনি 19 বছরের এক তরুণ । যুবক কবির মন তখন নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে । লিখলেন গীতিনাট্য "বাল্মিকী-প্রতিভা" - কবি প্রতিভার শ্রম সার্থক প্রয়াস যা আজও সমান জনপ্রিয় । তরুণ কবির হাতে ঝরনাধারার মতো কবিতা রচিত হতে থাকে । প্রকাশিত হল "ভগ্নহৃদয়" "রুদ্রচন্ড" কবি প্রতিভার পূর্ণ প্রকাশ না ঘটলেও সেই সময়ে কাব্য দুটি অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল । রবীন্দ্রনাথের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও ভাবি কাঁদম্বি দেবী তখন ছিলেন চন্দননগরে । কবি গেলেন তাদের কাছে । বাড়ির পাশে গঙ্গা ।
এখানে বসেই রবীন্দ্রনাথ লিখলেন "বউঠাকুরানীর হাট" তার প্রথম উপন্যাস, প্রতাপদিত্যের জীবন অবলম্বনে এর কাহিনী গড়ে উঠেছে । "বউঠাকুরানীর হাট" ধারাবাহিকভাবে 'ভারতী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । চন্দননগর থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এসে বাসা বাঁধলেন সদর স্ট্রিটের বাসা বাড়িতে । এখানে কবির জীবনে ঘটল এক নতুন উপলব্ধি । এই অপূর্ব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে জন্ম হলো কবির অন্তস্তি কাব্যসত্তার । সেইদিনই কবি লিখলেন তার বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" । 

                        1883 সালে 9 ডিসেম্বর, রবীন্দ্রনাথের বিবাহ হলো ঠাকুরবাড়ির এক কর্মচারীর কন্যার সাথে । 12 বছর বয়স । বিয়ের আগে নাম ছিল ভবতারিণী,নতুন নাম হল মৃণালিনী ।
WITH HIS MARINALINI


                          ঠাকুরবাড়ি শুধু যে বাংলা সংস্কৃতি জগতের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল তাই নয়, আর্থিক দিক থেকেও ছিল অন্যতম ধনী । পূর্ববঙ্গ উত্তরবঙ্গে ছিল বিস্তৃত জমিদারি । সব ভার এসে পড়ল রবীন্দ্রনাথের উপর । বাংলা গ্রাম,গঞ্জের,নদীপথে ঘুরতে ঘুরতে রবীন্দ্রনাথ যে বিপুল অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তা তার সাহিত্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল ।
                            বিভিন্ন সময়ে লেখা কবিতা গুলি নিয়ে প্রকাশিত হল "মানসী" । এতে কবি প্রতিভার শুধু যে পূরণ প্রকাশ ঘটেছে তাই নয়,বাংলা কাব্য জগতে এ এক নতুন সংযোজন । বন্ধু শ্রী শচীন্দ্রা  প্রকাশ করলেন নতুন একটি পত্রিকা 'হিতবাদী' । রবীন্দ্রনাথ হলেন এর সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক । সেই সময় জমিদারির কাজে নিয়মিত যেতে হত শিয়ালদহে । সেখানে ঘুরে বেড়ান গ্রামে গ্রামে । সেখানকার ছোট ছোট সুখ-দুঃখের আলোয় জন্ম নিতে থাকে একের পর এক ছোটগল্প "দেনাপাওনা"  "গিন্নি"  "পোস্টমাস্টার"  "ব্যবধান"  "রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা" প্রতিটি গল্প প্রকাশিত হয় 'হিতবাদীতে' । কিন্তু কয়েক মাস পরেই হিতবাদীর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল আর ভাতৃষ্পুত্রেরা একটি পত্রিকা বের করল 'সাধনা' । রবীন্দ্রনাথের গল্পের জোয়ার বইতে শুরু হলো । প্রথম গল্প বার হলো "খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন", তারপর সম্পত্তি সমর্পণ, কঙ্কাল, জীবিত ও মৃত, স্বর্ণমৃগ, জয় পরাজয়, দালিয়া প্রতিটি গল্পই বিয়োগান্ত । নিজের দেশ ও দেশবাসীর প্রতি ছিল তাঁর গভীর শ্রদ্ধা । ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে লিখেছিলেন বেশকিছু প্রবন্ধ, "ইংরেজ ও ভারতবাসী" "ইংরেজের আতঙ্ক" "সুবিচারের অধিকার" "রাজা ও প্রজা" । 

                            1894 সালে প্রতিষ্ঠিত হল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ।প্রতিষ্ঠা থেকে এর সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশের ছড়া সংগ্রহের কাজ শুরু  হয় । দক্ষিণারঞ্জন রচনা করলেন ঠাকুরমার ঝুলি । পরের বছর প্রকাশিত হল "চিত্রা" আর "চৈতালি" । চিত্রায় কবি স্বপ্নলোক থেকে বাস্তব জীবনের পটভূমিতে নেমে এসেছেন । সংকলিত হয়েছে কবির কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ।"এবার ফিরাও মোরে পূর্ণিমা, স্বর্গহাতে বিদায় ঊর্বশী, ব্রাহ্মণ । এছাড়া তার দুটি জনপ্রিয় কবিতা "পুরাতন ভৃত্য""দুই বিঘা জমি " তে অবহেলিত নির্যাতিত মানুষের প্রতি ফুটে উঠেছে গভীর সমবেদনা ।

                             কবিতা আর গানের পাশাপাশি লিখতে থাকেন একের পর এক কাব্যনাটক । বহুদিন পূর্বে লিখেছিলেন প্রকৃতির প্রতিশোধ, চিত্রাঙ্গদা, বিদায়, অভিশাপ, মালিনী । এবার লিখলেন গান্ধারীর আবেদন, সতী, নরকবাস, লক্ষ্মীর পরীক্ষা । কবিতা আর গানের জগতে থাকতে মন যেন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল । লিখলেন হাস্যরসাত্মক রচনা "চিরকুমার সভা"
with Daughter-in-Law Pratima Devi

                            1901 সালে নতুন করে বঙ্গদর্শন প্রকাশিত হলো । রবীন্দ্রনাথ হলেন তার সম্পাদক । প্রবন্ধ কবিতার সাথে প্রকাশিত হল নতুন উপন্যাস "চোখের বালি" । শিলাইদহে  ছিলেন বহুদিন সপরিবারে । এরপর এলেন শান্তিনিকেতনে । এখানে প্রতিষ্ঠা করলেন আবাসিক বিদ্যালয় । স্ত্রী মৃণালিনী দেবী অসুস্থ হয়ে পড়লে, কলকাতায় নিয়ে আসা হয় । অল্প দিনের মধ্যেই তার মৃত্যু হল, তখন মৃণালিনী দেবীর বয়স ছিল 30 , রবীন্দ্রনাথের 41 । তাদের তিন কন্যা মাধুরীলতা, রেনুকা, মিরা আর দুই পুত্র রবীন্দ্রনাথ আর মনীন্দ্র । মৃণালিনী দেবীর মৃত্যুর অল্পদিন পরেই কন্যা রেণুকা অসুস্থ হয়ে পড়লে কবির আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো গেল না । তখন রেণুকার বয়স মাত্র 13 ।

                             কবির ভাবনা বিকশিত হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন আর শিলাইদহে । তার সাথে গীতাঞ্জলির গান লেখা  । প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এর অনুরোধে কবি লিখতে আরম্ভ করলেন "গোরা" উপন্যাস । তিন বছর ধরে গোরা প্রকাশিত হল  'প্রবাসীতে' । রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিন্দু সমাজ, জীবন, তার দর্শীয় সংকীর্ণতা, জাতিভেদের ঊর্ধ্বে রবীন্দ্রনাথ এক সত্যের ইঙ্গিত করেছেন । 
AT SHANTINIKETAN

                             শান্তিনিকেতনে বসে কবি লিখেছেন ডাকঘর । বহুদিন দেশের বাইরে যাননি রবীন্দ্রনাথ । পুত্রবধূকে নিয়ে গেলেন বিলেতে । বিদেশে কবির সাথে পরিচয় হলো ইংরেজ কবি ইয়েটস এর সাথে । রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ তিনি এর ভূমিকা লিখলেন ।


                               ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হল গীতাঞ্জলি ।ইংল্যান্ডের শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সাড়া পড়ে গেল । কাগজে কাগজে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা । কবি আমেরিকা হয়ে ফিরে এলেন কলকাতায় । সেখানকার পরিবেশ ভালো লাগেনা ফিরে এলেন শান্তিনিকেতনে । 15 নভেম্বর 1913 সালে,  সন্ধ্যেবেলায় খবর এল যে কবি সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ।তিনি প্রথম প্রাচীনবাসী যিনি এই পুরস্কার পেলেন ।
                                 লিখলেন নতুন কবিতা ছবি । তারপর একের পর এক সৃষ্টি হতে থাকে বালাকার অবিস্মরণীয় সব কবিতা । সবুজের অভিযান, শঙ্খ, শাজাহান, ঝড়ের খেয়া, বলাকা
                       নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে সবুজপত্র । নতুন কোন পত্রিকা চালু হলেই তাকে ভরিয়ে তোলবার দায়িত্ব এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর ।


                        সবুজপত্রে একের পর এক প্রকাশিত হল ছোটগল্প এদের মধ্যে বিখ্যাত "হৈমন্তী" "বোষ্টমী" "স্ত্রীর পত্র"
THE GITANJALI
                         1915 সালে রবীন্দ্রনাথ সবুজপত্র লিখতে আরম্ভ করলেন "ঘরে-বাইরে" । 1911 সালের 13 এপ্রিল ইংরেজ সৈন্যরা জালিয়ানওয়ালাবাগে 379 জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করলে, তীব্র ঘৃণায় রবীন্দ্রনাথের সমস্ত অন্তর ভরে উঠল ।  তিনি বড়লাট লর্ড চেমসফোর্ড কে লেখা খোলা চিঠিতে সরকার প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করলেন ।প্রৌঢ়ত্বে পা দিয়েছেন কবি । পরিণতির সাথে সাথে রচনায় ফুটে ওঠে পরিবর্তনের ছোঁয়া । লিখলেন "রক্তকরবী" "চণ্ডালিকা" । রাশিয়ায় গিয়ে ভালো লেগেছিল কবির সেখানকার মানুষ কর্মপ্রচেষ্টা । নতুন দেশ গড়ার উদ্যত কবিকে মুগ্ধ করেছিল । তিনি লিখলেন "রাশিয়ার চিঠি" । বৃদ্ধ বয়সে এসে কবি ডুবে থাকেন গান আর ছবি আঁকায় । ফাঁকে ফাঁকে লিখলেন "শ্যামলী", "প্রান্তিক", "সেঁজুতি", "আকাশ প্রদীপ", "ছড়ার উৎসব" নৃত্যনাট্য শ্যামা ।
                            কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দেওয়ার জন্য তিনি প্রথম বেসরকারি ব্যক্তি যিনি সম্মান পেলেন । চিরাচরিত প্রথা ভেঙে কবি বাংলায় বক্তৃতা দিলেন ।

                            1904 সালের 7 আগস্ট অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে শান্তিনিকেতনে কবিকে ডক্টর উপাধি দেওয়া হলো । ইংরেজরা দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত সম্মান জানালো কবিকে ।

THE NOVEL
                             কবির স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে,আগের মত সচ্ছল নয় ।তবুও তার মধ্যে লিখলেন তার বিখ্যাত গল্প "ল্যাবরেটরী" , "বদনাম" ।

                           বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলে জান অন্যে লিখে নেয় । এ সময় লেখা কবিতাগুলো সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হল "রোগশয্যায়" । কবি শান্তিনিকেতনে ছিলেন ।চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে আসা হল ।জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির অপারেশন করা হলো ।

                         তার কিছুক্ষণ আগে লিখেছিলেন জীবনের শেষ কবিতা ---

" তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করে

বিচিত্র ছলনা জালে হে ছলনাময়ী

শেষ পুরস্কার নিয়ে যায় সে যে আপন ভান্ডারে 

অনায়াসে যে পেরেছে ছলনা সহিতে 

সে পায় তোমার হাতে শান্তি অক্ষয় 

অধিকার   "

                          অপারেশনের পর কবি জ্ঞান হারালেন । সেই জ্ঞান ফিরল না আর । রাখি পূর্ণিমার দিন দুপুর বেলায় 1941 সালের 07 আগস্ট একটি মহান জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো ।


credit-- internet(google,wiki,etc)

Thursday 5 September 2019

কাজী নজরুল ইসলাম

YOUNG NAJRUL



                             খুব দরিদ্র পরিবারের এই ছেলেটি বাংলা সাহিত্য জগতে অসাধারন বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন । কলমকে এক অনন্য অস্ত্র হিসেবে নিয়ে জুলুমের বিরুদ্ধে বহুদিন দিন লড়াই করে গেছেন । নিজের বৈপ্লবিক চিন্তা ধারার জন্য কারাগারের জীবনটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন ।
                           হ্যাঁ আমি সেই কবির কথায় বলছি, সেই সাহিত্যিক,সেই দেশের ছেলে দেশ প্রেমিক কাজী নজরুল ইসলামের কথায় বলছি । যার কবিতা, নাত, গজল,হামদ এবং ইসলামী গান, যা প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের বুকে আগুন জ্বালিয়েছে। সত্যি তিনি ছিলেন শ্রমিক,কবি,সাহিত্যিক,সৈনিক,অন্যায়ের প্রতিবাদী এক অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ।

                           বাল্য কালে সবাই দুখু মিয়া নামেই ডাকতো।

                           1899 সালের 25 May , বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন । খুব সাধারন দুঃখ, দুর্দশার, অভাবের মধ্য দিয়ে কবির এক কাল কেটেছে । পিতা কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন । 'কাজী' হচ্ছে তাদের বংশের উপাধি । পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাজারের মুত্তাওয়াল্লি, ফলে ছোট বেলা থেকেই ইসলামী চিন্তা ও ভাবধারার ভিতর দিয়ে বড়ো হন কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।

                           বাল্যকালে মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় । মাত্র 10 বছর বয়েসে সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতেন । আসাধর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন । ছোট বেলা থেকেই পবিত্র কুরআনের অর্থ ও মর্মবাণী শেখ শুরু করেন ।  বাংলা,আরবি ছাড়াও সেখানে ফার্সি ভাষাও শিখতেন ।
কিন্তু, হটাৎ করে তার পিতা মারা গেলে কবি ইয়াতিম হয়ে যান এবং অসময়ে শিক্ষার দরজা বন্ধ হয়ে যায় । যাবে না কেন , সংসারে নেমে আসে দুঃখ,দুর্দশা, অভাব, অনটন । তারপর তিনি  'লেটো' গানের দলে যোগ দিলে খুব অল্প সময়ে নাম অর্জন করেছিলেন ।
                                  তার অসাধারন প্রতিভার বলে, তিনি 'লেটো' দলের প্রধান নির্বাচিত হন । সেখান থেকেই তিনি বিভিন্য বই পত্র পড়ে সাহিত্যের জগতের সাথে পরিচিত হন । এই সময় তিনি কিছু কবিতা, পালা গান, ছড়া গান লিখে অল্প সময়ে নাম অর্জন করেন । এর পরে তিনি গ্রামের কিছু লোকের সাহায্যে রানীগঞ্জ এর শিয়ালসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন । শৈশব থেকেই কবি ছিলেন চঞ্চল স্বভাবের , তাই স্কুলের চার দেওয়াল আটকাতে পারে নি তাকে ।  একদিন হটাৎ স্কুল ছেড়ে পালিয়ে চলে গেলেন । কিন্তু অভাবের সময়, কিছু একটা করে খেতে হবে। তাই আসানসোলের এক রুটির কারখানায় কাজে যোগ দেন । বেতন মাসিক 5 টাকা । জ্ঞানের খিদে তখনও মরে যায় নি ।   কাজের ফাঁকেই বিভিন্য বয় পড়া থেকে শুরু করে কবিতা,গজল, গান ইত্যাদি লেখার কাজ চালিয়ে যেতেন ।
তার অসাধারন প্রতিভাই মুগ্ধ হয়ে সেখানকার পুলিশ ইন্সপেক্টর সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং ময়মনসিং জেলার দরিরামপুর স্কুলে ভর্তি করে দেন । পরে তিনি বন্ধুদের টানে আবার রানীগঞ্জের শিয়ানসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন ।

IN BRITISH ARMY

                             তারপর শুরু হয় বিশ্ব যুদ্ধ । তখন তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র । যুদ্ধের কারণে আর লেখাপড়া হলো না । যোগ দেন সেনা বাহিনীতে । 49 নম্বর বাঙালি পল্টন রেজিমেন্টের হাবিলদার পদে প্রমোশন লাভ করেন । সৈনিক জীবনে চলে যেতে হয় পাকিস্তানের করাচি তে, সঙ্গে যায় কবিতা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষিদে । সেখানে এক পাঞ্জাবি মৌলবীর সাথে পরিচয় হলে তার কাছে ফার্সি ভাষা শিখতে থাকেন এবং মহা কবি হাফিজ, শেখ সাদি প্রমুখ বিশ্ব বিখ্যাত কবিতাকে লেখা পড়েন । তারপরেই গল্প, কবিতা,উপন্যাস,হামদ,গজল , নাত লেখায় ডুবে যেতে থাকেন । কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের তেমন সুযোগ না পেলেও তিনি হাল ছাড়েন নি , সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান ।

                         যুদ্ধ থেমে গেলে 1919 সালে এপ্রিল মাসে পল্টন রেজিমেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর তিনি ফিরে আসেন নিজ মাতৃভূমি চুরুলিয়া গ্রামে । এরপর শুরু হয় তার একনিষ্ঠ কাব্যচর্চা । তার লেখা একাধারে 'দৈনিক বসুমতী' 'মুসলিম ভারত' 'মাসিক প্রবাসী' 'ধুমকেতু' প্রভৃতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হতে থাকে । নজরুলের কবিতা তদানীন্তন রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল ।  ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে নিপীড়িত,নির্যাতিত,শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের জাগরণের তিনি ছিলেন মহান প্রবক্তা । 1921 সালে মাত্র 22 বছর বয়সে তিনি রচনা করেন তাঁর বিখ্যাত অমর কবিতা 'বিদ্রহি' বাংলা সাহিত্যে তাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে অমর করে রেখেছে ।

" বল বীর 
বল চির উন্নত মম শির 
শির নেহারি নত শির ওই 
শিখর হিমাদ্রির । "

                    দেশ প্রেমিক কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে তার কলমকে অস্ত্র ও বুলেট হিসেবে ব্যবহার শুরু করলেন । ইতিমধ্যে সমগ্র দেশে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী তুমুল আন্দোলন । কাজী নজরুল ইসলাম 'সাপ্তাহিক ধুমকেতু' পত্রিকায় লিখতে লাগলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে । অন্যায়,অবিচার, অসাম্য ও অসত্যের বিরুদ্ধে তিনি লেখনীর মাধ্যমে শুরু করলেন প্রচন্ড বিদ্রোহ । তিনি মুসলিম জাতিকে তাদের অতীতের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে শুনিয়েছেন জাগরণের বাণী । তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন পরাধীনতার শৃংখল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য । 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত "চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের" মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী এদেশের বিশেষ করে মুসলমান কৃষকদের ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব করে ফেলেছিল । মুসলমান কৃষকরা তাদের জায়গা-জমি ও বাড়িঘর সব কিছু হারিয়ে প্রায় পথে বসেছিল । কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক চক্রের বিরুদ্ধে এদেশের কৃষক সমাজকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানান । তিনি 'সর্বহারা' কাব্য গ্রন্থের 'কৃষাণের' গান নামক কবিতায় লিখেছেন---
  " চল চল চল !
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল, 
নিম্নে উতলা ধরণী-তল, 
অরুণ পাতে তরুণ দল 
চল-রে চল-রে চল ।
চল চল চল  ।। "

                           বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার এই কবিতাটিকে রণসংগীতের মর্যাদা দান করেছেন । পরাধীনতার শৃংখল মুক্ত জাতির জীবনে অন্যায়,অবিচার ও অত্যাচার নির্মূল করার ব্যাপারে তার অবদান চির অম্লান । কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহু হামদ,নাত,গজল,আধুনিক গান,ইসলামী গান,গল্প,কবিতা,সাহিত্য ও উপন্যাস রচনা করেন ।এসকল বিষয়ে তাঁর রচনার সংখ্যা কয়েক সহস্র ।
তাঁর রচনাবলির মধ্যে অগ্নিবীণা,বিষের বাঁশি,দোলন চাঁপা চক্রান্ত,প্রলয় শিখা, ভাঙার গান, নতুন চাঁদ, ফনিমনসা, রিক্তের বেদন, মৃত্যুক্ষুধা, সাম্যবাদী,সর্বহারা,সিন্ধু-হিন্দোল, রাজবন্দীর জবানবন্দী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ "নজরুল ইন্সটিটিউট" নামে একটি প্রতিষ্ঠান তার লেখার ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে । তিনি ফার্সি ভাষার মহাকবি হাফিজের কতগুলো কবিতার বাংলা অনুবাদ করেছেন । কবি কাজী নজরুল ইসলামের অধিকাংশ কবিতা ও সাহিত্য রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে । ইংরেজি ভাষায় তাঁর লেখার অনুবাদ হয়েছে এবং হচ্ছে । 1945 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কবি জগত্তারিণী পুরস্কার প্রাপ্ত হন । 1960 সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন । 1970 সালে বিশ্বভারতি কবিকে 'ডিলিট' উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে । 1973 সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডিলিট' উপাধি লাভ করেন । 1975 সালে 'একুশে পদক' প্রদান করা হয় ।

                                 আধুনিক বাংলা কাব্য সাহিত্যে মুসলিম সাধনার সবচেয়ে বড় প্রেরণা হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম । তাঁর আবির্ভাবে মুসলিম স্বতন্ত্র কাব্য সাধনার দিগন্তে নবোদিত সূর্যের মহিমা বিচ্ছুরিত হয়েছে । ইসলামী বিভিন্ন বিষয় গুলোকে তিনিই প্রথমবার সত্যিকারের সাহিত্যের রূপ দিয়েছিলেন ।কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও প্রবীণদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন, মহাকবি কায়কোবাদ, কবি গোলাম মোস্তফা, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং নবীনদের মধ্যে কবি ফররুক আহমেদ, সৈয়দ আলী আহসান তালিমহোসেন,কাদির নেওয়াজ মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবোধের বাণী উচ্চারণ করেছিলেন । কিন্তু সে বানি নজরুল ইসলামের নাই বজ্রকন্ঠ ছিল না,ছিল অর্ধচ্ছারিত । নজরুল কাব্যে ইসলামী ও মুসলিম ঐতিহ্য বলিষ্ঠ ব্যঞ্জনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে । নজরুল ছিলেন মুসলিম পুনর্জাগরনের কবি এবং স্বাধীনতা চেতনার প্রতীক । বাংলা ভাষায় আরবি,ফারসি শব্দের সার্থক ব্যবহার, ইসলামি আদর্শ এবং মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়নে নজরুল ইসলামের অবদান অবিস্মরণীয় ।

                   তিনি 'খেয়াপারের তরণী' কবিতায় লিখেছেন --

"আবু বকর, উসমান, উমর আলী হায়দার,
দাঁড়ি যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ডর ।
 কান্ডারি এ তরীর পাকা মাঝি-মাল্লা,
দাঁড়ি মুখে সারি গান লা-শরীক আল্লাহ" ।

                        কারবালার মর্মান্তিক বিয়োগান্ত ঘটনা কবি কাজী নজরুল ইসলাম কি সুন্দর ভাবে তার কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন ---

"নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া ।
আম্মা ! লাল তেরি খুনকিয়া খনিয়া
কাঁদেকোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে
সে কাঁদনে আসু আনে সীমারের ছোরাতে। "

                       ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম জাতির স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন---

" ধর্মের পথে শহীদ যাহারা, আমরা সেই সে জাতি ।
 সাম্য মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বের করেছি জ্ঞাতি
আমরা সেই সে জাতি ।।"

                          কাজী নজরুল ইসলামের আল্লাহর প্রতি ছিল অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস । মানুষের প্রতি আল্লাহ পাকের অশেষ নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি লিখেছেন ---

"এই সুন্দর ফুল সুন্দর মিঠা নদীর পানি 
খোদা তোমার মেহের বানী ।।
এই শস্য-শ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালিখানি
খোদা তোমার মেহের বানী ।।
তুমি কতই দিলে মানিক রতন,ভাই বেরাদর পুত্র স্বজন
ক্ষুদা পেলে অন্ন জোগাও মানি না মানি
খোদা তোমার মেহের বানী । "

                                তিনি ইসলামের মৌলিক ইবাদত ও বিধানকেও বাংলা কাব্যে যথাযথভাবে প্রয়োগ করেছেন । তিনি লিখেছেন----

" মসজিদে ঐ শোন রে আজান, চল নামাজে চল,
দুঃখে পাবি সান্তনা তুই বক্ষে পাবি বল।
ওরে চল নামাজে চল ।
 তুই হাজার কাজের আছিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলি না ,যে দিনি দুনিয়ার রাজা ।
তারে পাঁচবার তুই করবি মনে, তাতেও এত ছল
ওরে চল নামাজে চল ।"

                                  এমনিভাবে কবি নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্যে মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবোধ সৃষ্টি করেছেন । তার প্রতিটি ইসলামিক গান,গজল,হামদ ও নাত প্রায় প্রত্যেক বাঙালী মুসলমানের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান,ওয়াজ মাহফিল ও মিলাদ মাহফিলে কবির লেখা হামদ নাত ও গজল পঠিত হচ্ছে ।

                                    1942 সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক দুরূহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং চিরদিনের জন্য বাকশক্তি  হারিয়ে ফেলেন । তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য দেশের সকল প্রকার চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার পর 1953 সালে সুচিকিৎসার জন্য সরকারি ব্যবস্থা নিয়ে লন্ডনে পাঠানো হয় । কিন্তু সেখানেও কবিকে রোগ মুক্ত করা সম্ভব হয়নি ।

HIS ILLNESS

                                    তারপর 1972 সালের তাকে বিদেশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর 1976 সালের 29 আগস্ট এই বিখ্যাত মনীষী পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন । তিনি তার একটি ইসলামী সংগীতে বলে যান, তাকে মসজিদের পাশে কবর দেওয়ার জন্য । যেন কবরে শুয়ে মোয়াজ্জেমের মধুর আযানের ধ্বনি শুনতে পান ।

                              তিনি লিখেছেন --


"মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই ।
যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই ।।



 আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,

পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে ।
গোর-আযাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই ।।"


                     তার সেই অছিয়ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবিকে সমাহিত করা হয় । মসজিদের পাশে কব আজ চিরনিদ্রায় শায়িত । প্রতিদিন প্রায় অসংখ্য মানুষ নামজান্তে কবির মাজার জিয়ারত করছে ।আজ কবি পৃথিবীতে নেই, কিন্তু বাংলা কাব্যে কবি ইসলামী ভাবধারা মুসলিম স্বতন্ত্রবোধ সৃষ্টিতে অবদান রেখে গেছেন । প্রতিটি শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের হৃদয়ে কবি অমর হয়ে থাকবেন ।


CRETID-- GOOGLE,WIKI,ETC..